Wednesday, July 24, 2019

গোয়েন্দা নিজামুল

গোয়েন্দা নিজামুল

এক রাত প্রায় ১১:২৫ এর দিকে আমি প্রতিদিনের মতোই আমার টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম। বাসায় যেতে অনেকটা দেরি হয়েছিল কারণ সেদিন টিউশনি শেষ করে বের হবার সময়, অন্ধকার পথে চলতে গিয়ে, হোঁচট খেয়ে আঘাত পাই। সেই আঘাতের ফলে আমাকে কিছুক্ষণ সেখানেই ফার্মাসি খুঁজে, মলম-পট্টি করতে হলো। আমি সড়ক পাড় করার সময়, আমার হাঁটাচলার ধারণ দেখে, সড়কের পাশের টঙ্গের সামনে পুলিশ আমাকে কাছে ডাক দিলো। আমিও ভদ্রলোকের মতো তাদের ডাকের সাড়া দিয়ে, তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম কি হয়েছিল। কিন্তু আমার কোনো কথার উত্তর না দিয়েই, আমার দেহ অনুসন্ধান করতে লাগল। অনুসন্ধানের ফলে তারা আমার প্যান্টের পকেটের ভেতর একটি ইয়াবার প্যাকেট পেল। আসলে, এটা তারা খুঁজে পায়নি, তারা নিজেই সেই প্যাকেটটা আমার পকেটের ভেতর, সুপরিকল্পিতভাবে রেখেছিল। এই দৃশ্য দেখার পর আমি চরম ভাবে আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। আমার চেহারার মধ্যে তা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছিল। অতঃপর তারা আমাকে হাতকড়া পড়িয়ে, তাদের পুলিশের গাড়িতে উঠতে বললো। আমি সাহস জুটিয়ে, কিছুটা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করায় আমার গালে কষিয়ে এক চড় লাগানো হলো। নিজেকে এই এমন সময়ে, এমন অসহায় অবস্থায় দেখে, আমার মাথা কাজ করছিল না। আমি গাড়ির মধ্যে বসেছিলাম তাদের চা-সিগারেট শেষ হবার অপেক্ষায়। আমি গাড়িতে উঠার ৫-৭ মিনিট পরেই, টঙ্গে বসা দুজন বালক এসে পুলিশদের সঙ্গে, আমার সম্পর্কে তর্কবিতর্ক করতে লাগল;

- জ্বি অফিসার, আপনাদের সঙ্গে একটি বিষয়ে কিছু আলোচনা করার ছিল। আপনাদের কিছু মূল্যবান সময় পেতে পারি?
- কোন বিষয়ের কথা বলছেন? কে আপনারা?
- আমি প্রথমে প্রশ্ন করেছি, আপনে আগে তার জবাব দিন।
- আগে আপনে নিজের পরিচয় দিন।
- আমার পরিচয়; নিজামুদ্দিন আলম ওরফে নিজামুল। আমি একজন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ুয়া ছাত্র। কিন্তু এগুলো তো আমার সাধারণ পরিচয়। আপনি তো মূলত আমার রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ক্ষমতার কথা জানতে চাচ্ছেন। অর্থাত্, আমার সঙ্গে আপনার কথা বলার সুরটা কেমন হওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, আমার নিজস্ব কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকলেও, অনেক রাজনৈতিক কর্মকর্তা আমাকে চিনে থাকে। কিন্তু সে পরিচয়টা আপাতত গোপন রাখা হোক। আমি এবার আপনাদের কিছু খুবই সরল-সোজা প্রশ্ন করব আর আপনি খুবই সরল-সোজাভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন।
- আপনি এতক্ষণ যা কিছু বলেছেন, তার অধিকাংশ তথ্যই অপ্রয়োজনীয় এবং সময় অপচয়ী। তাই আমরা আপনার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিব না।
- শুনুন, অফিসার সাহেব, আমার পরিচয়টা চিরকালের জন্য গোপন রাখার কোনো উদ্দেশ্য নেই আমার, কিন্তু আপনার জানার আগ্রহটা, আপনার মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা অস্থিরতা প্রকাশ করছে। আপনার মনে এখন কতটা সংকোচ হচ্ছে, সেটা আপনার ভাবভঙ্গি দ্বারা প্রকাশ করছেন।
- কেমন ভাবভঙ্গির কথা বলার চেষ্টা করছেন আপনি?
- আমার পরিচয় অনেক রাজনৈতিক কর্মকর্তা জানার ব্যাপারটা বলার কিছু সময় আগ পর্যন্ত আপনার ঘাড় আরাম করে নয়ে, সামান্য হেলান দিয়ে ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের কথা ওঠানোর পর থেকেই দেখছি, আপনার ঘাড় আর আরামে হেলান দিয়ে নেই, এখন সেটি একটি সতর্ক সোজা আকৃতি ধারণ করেছে। অর্থাত্, আপনার মনে সংকোচ হচ্ছে, আমি যদি আপনার কোনো বড়সড় ক্ষতি করে বসি। কি, ঠিক বললাম কিনা?
- এসব অযৌক্তিক আলাপ-আলোচনা অন্য কারো সঙ্গে করেন।
- আপনার কাছে অযৌক্তিক লাগতেই পারে। আমার কাছে আপনার একটা বৈশিষ্ট্য খুবই অযৌক্তিক লেগেছে, আর সেটা হলো ঐ নির্দোষ ছেলেটিকে, সুপরিকল্পিত ভাবে আটক করার ব্যাপারটা।
- কাউকেই সুপরিকল্পিত ভাবে আটক করা হয়নি। আপনার কথাটি সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন। আমরা তার প্যান্টের পকেট থেকে এই ইয়াবার প্যাকেট পেয়েছি। সে একজন প্রমাণিত অপরাধী, তাই তাকে আটক করা হয়েছে।
- প্রমাণ আমার কাছেও একটি রয়েছে। কিন্তু সেটা প্রদর্শন করার পূর্বে আমি একটা কথা জানতে চাই। সেটা হলো, আপনার পুলিশের ট্রেইনিংয়ের সময় মনে হয় আপনাকে শেখানো হয়নি।
- কিসের কথা বলছেন।
- আপনি কি এতটুকু শেখেননি যে, অপরাধীর কাছে কোনো প্রকারের প্রমাণ পেলে, তাকে পকেটে না রেখে, একটা আলাদা প্যাকেটে রাখতে হয়? এটা তো কখনওই হতে পারে না, যে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আপনার ট্রেনিংয়ের সময়ে শেখানোই হয়নি। তাহলে আপনিই বলুন, আপনার ট্রেনিং কি আদৌ পুলিশেরই ছিল, নাকি অন্য কোন কিছুর ছিল?
- আমাদের কাছে আজকের মতো আলাদা প্যাকেট শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে আমি এটা আমার পকেটের ভেতর সুরক্ষিতভাবে রেখেছি। থানায় গিয়ে, সেখান থেকে প্যাকেট নিয়ে, প্যাকেটে ভরে, রেখে দিব।
- তাই নাকি? কারণ আমি তো জানি, এই ছেলেটা এখানে আসার আগে থেকেই আপনার কাছে এই ইয়াবার প্যাকেটটি রয়েছে।
- কি আবল-তাবল বোকছেন? আমার কাছে এটা আগে থেকেই থাকবে কিভাবে? আমি তো এটা সেই ছেলেটার পকেট ঘেঁটে খুঁজে পেয়েছি।
- আমি যদি বলি, আমার কাছে প্রমাণ আছে, তাহলে কি বলবেন?
- কি ধরনের প্রমাণ?
- প্রমাণ দেখতে চান? দাঁড়ান!

প্রমাণ চাওয়ায়, পকেট থেকে ফোন বের করে, নিজামুল সেই পুলিশ অফিসারকে তাদের কুকীর্তির ভিডিও ফুটেজ দেখায়। সে ফুটেজটি দেখে পুলিশ অফিসারটি দ্রুততার সঙ্গে নিজামুলের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে, ফোন থাপা দিতে নিল। কিন্তু তখনই নিজামুল সেই পুলিশ অফিসারকে জানালো, যে ফোনটা নিয়ে কোনো লাভ নেই, কারণ ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দ্বারা ছড়িয়ে পড়েছিল। ইতিমধ্যেই প্রায় ৬৬৯৭ টি ভিউ হয়ে গিয়েছিল। যার মধ্যে দর্শক ছিল অনেক উচ্চ পদের সরকারি এবং রাজনৈতিক কর্মকর্তারাও। নিজামুলের এই কান্ড দেখে পুলিশ অফিসার তাকে প্রাণের হুমকি দেয়। তখনই চারিদিক থেকে সাইরেন বাজার আওয়াজ আসতে লাগল। পুলিশের একটি ফোর্স কিছুটা দূরত্ব থেকে সবকিছু শুনছিল নিজামুলের ব্যাগের ভিতরে থাকা ফোন থেকে। সেই দুজন পুলিশ অফিসারকে হাতেনাতে ধরার জন্য, নিজামুলকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাটি সেখানেই শেষ হয়নি। নিজামুল সেই পুলিশ অফিসারকে আদেশ দিল আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে, হাতকড়া খুলে, সবার সামনে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে। ব্যাপারটা দেখে আমি যদিও প্রথমে আশ্চর্য হই, পরবর্তীতে তার চোখের দিকে তাকানোতে তার মনের প্রকৃত ভাব কিছুটা বুঝতে পেলাম। তার রক্ত চড়া চোখ আর অতিরিক্ত চওড়া মুচকি হাসি দেখে তার মনের বিকৃত গঠন অনেকটা বোঝা যায়। ততক্ষণে সে সেখানে উপস্থিত সকল পুলিশ অফিসারকে বললো আবার একটি দুরত্বে গিয়ে অপেক্ষা করতে। অতঃপর তারা সেখান থেকে কিছু সময়ের জন্য নিজের পূর্ববর্তী স্থানে ফিরে চলে যায়। তারপর সে নিজের বন্ধকে বলে, "ব্যাগ থেকে হাতুড়িটা বের কর্ আর লাইভ ভিডিও রেকর্ড কর্" এটা শুনে তার বন্ধু ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করে তার হাতে দিল এবং মোবাইল ফোনে লাইভ ভিডিও রেকর্ড করা শুরু করলো। নিজামুল সেই পুলিশ অফিসারকে ঐ টংয়ের বেঞ্চের মধ্যে বসালো। পুলিশ অফিসারটি ভয়ে কাঁপছিল এবং কাঁপতে কাঁপতে বার বার ক্ষমা চাচ্ছিল। তার পায়ের কাঁপুনি এবং নিজামুলের চেহারার ভয়ঙ্কর হাসিটা দেখে এক মুহূর্তের জন্য আমার নিজেরই ভয় করছিল। নিজামুল হাতুড়িটা হাত থেকে রেখে, নিজের পকেট থেকে সার্জিক্যাল গ্লাভস বের করে পড়ল। তারপর হাতুড়িটা আবার হাতে নিয়ে, আমাকে কাছে ডেকে বললো, "সে তোমার গালে থাপ্পড় মেরেছে, তুমি আঘাত পেয়েছ, এবার তুমিও তার গালে ইচ্ছামতো থাপ্পড় মারো। আর হ্যাঁ, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাপ্পড় মারবা, যাতে সবাই অন্যায়ের শাস্তির একটা ধারণা পেতে পারে।" এটা শুনে আমি বললাম, "না, থাক্! সে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে, আমিও ক্ষমা করে দিয়েছি।" আমার এই উক্তি শুনে সে এতো জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগল, যে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে মজার কৌতুক শুনেছেন মহাশয়। এমন বিরাট মাত্রায় হাসতে হাসতে হঠাত্ করে পুলিশ অফিসারের হাতে হাতুড়ি দিয়ে জোড়ে আঘাত করলো। আঘাত করামাত্র পুলিশ অফিসারটি চিত্কার করে উঠল এবং আমি ভয়ে পেছনে চেপে গেলাম। তার প্রথম আঘাতের ফলে পুলিশ অফিসারের হাত ভেঙে গেল, কিন্তু ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়নি। প্রথম আঘাতের পর সে পুলিশ অফিসারকে তার আরেক হাত আগে বাড়াতে বললো। পুলিশ অফিসারটি ভয়ের চোটে ছটফট করে পিছনের দিকে পলায়নের চেষ্টা করছিল। কিন্তু নিজামুল সে অফিসারের আরেক হাত মুহূর্তের মধ্যেই থাপা দিয়ে ধরে নিল এবং তা বেঞ্চের উপর রেখে আবার আঘাত করল। পুলিশ অফিসারটির উভয় হাত থেকে অধিক পরিমাণের রক্তপাত হচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখার পর আমি পুলিশ অফিসারের জন্য আফসোস করছিলাম। আমার চেহারায় তার প্রতি ফোটে উঠা মায়া দেখে নিজামুল আমাকে বললো, "শুনো, যার প্রতি তুমি সহানুভূতি দেখাচ্ছ, তার কারণেই অসংখ্য গরীব এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের নির্দোষ সন্তানদের জেলে যেতে হয়েছে, তাদের পরিবারকে লজ্জিত হতে হয়েছে, তাদের নামের মধ্যে 'অপরাধী' নামক দাগ পড়েছে, তাদের কেউও কখনও সিভিল সার্ভিসে যোগদানের স্বপ্ন দেখতে পারবে না, অনেক যুবকের বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হবে, অনেকে তো এই অভিশপ্ত ঘটনার জন্য মানসিক রোগী হয়ে বিভিন্ন অনৈতিক পথ অবলম্বন করবে; সেগুলোর জন্য দায়ী শুধু এই মানুষরূপী পশুটি। আজ এই লোকটা তোমার জীবনটাও নষ্ট করতে নিয়েছিল, কিন্তু মহান আল্লাহ্ তা'আলা তোমাকে এর নোংরা হাত থেকে তোমায় বাঁচিয়েছেন। আজ আমি এই মিশনে এসেছিলাম ডিপার্টমেন্টকে একটি শর্ত দিয়ে, যে আমি যদি এই অফিসারকে হাতেনাতে ধরতে পারি, তাহলে তার সঙ্গে যা ইচ্ছা করতে পারব, অর্থাত্ এই ব্যাক্তির জীবনের কি হবে না হবে, সেটা আমিই সিদ্ধান্ত নিব।" উক্তি শুনে পুলিশ অফিসারটি সেই দুটো রক্তাক্ত হাত জোড় করে, তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল। এটা দেখে নিজামুল তার চেহারার দিকে তাকিয়ে একটা বড় করে মুচকি হাসি দিল এবং ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, "সে সকল দর্শক এখন ভিডিওটি দেখছেন আর যে সকল দর্শক এটা ভবিষ্যতে দেখবেন, তাদের উদ্দেশ্যে অল্প কিছু কথা বলতে চাই। আমি হলাম একজন গোয়েন্দা অফিসার। আমি ঠিক এই লোকটার মতোই একজন আইনের লোক। কিন্তু এখানে সামঞ্জস্য রয়েছে শুধু আমাদের পেশার শ্রেণী ও ধরণ, তাছাড়া অন্য কোনো ব্যাপার নয়। আমি আজ শাস্তি দেয়ার জন্য কিছু আইন বিরোধী পথ অবলম্বন করে থাকলেও, এমনটা করার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। আমি অন্যায় এবং অবিচারকে প্রচুর ঘৃণা করি। আর যখন চোখের সামনে দেখতে পাই, আইনের রক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া কর্মীরা নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। খুবই কষ্ট লাগে আমার কাছে, যখন রক্ষক হয়ে পড়ে ভক্ষক। এই লোকটা শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের জন্য এতগলো নির্দোষ যুবকদের উপর আরোপ লাগিয়েছে, গায়ে হাত তুলছে, মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে এবং অসংখ্য জীবন নষ্ট করেছে। আজ তাকে একটা উচিত শাস্তি হিসেবে এই পন্থা বেছে নিয়েছি। এটা আমি প্রকাশ্যে করছি, যাতে দেশের জনগণ উক্ত বিষয়ের মাধ্যমে আরো সচেতন হয়ে উঠতে পারে। আমি সবাই দেখাতে চাই, আইন মরে যায়নি। পৃথিবীতে এখনও আইন মেনে চলার মতো এবং আইনের অবমাননার ফলে শাস্তি দেয়ার মতো মানুষও বেঁচে আছে। তার এই দুই হাত দিয়ে সে অসংখ্য মানুষকে কষ্ট দিয়েছে, তাই হাতকে আমি ভেঙে ফেলেছি, নাহলে ভবিষ্যতে এই হাত দিয়ে আরো অনেক জীবন নষ্ট করে বেড়াবে।" তার কথাগুলো শুনার পর থেকে আমার জীবনে এক নতুন লক্ষ নির্ধারণ করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম একদিন স্বয়ং একজন পুলিশ অফিসার হয়ে মানুষের কল্যাণ করব। কারণ যে দেশের মধ্যে অনৈতিক পুলিশ অফিসার ভরপুর পরিমাণে রয়েছে, সেই দেশের মধ্যে কিছু সত্ কর্মকর্তাদের প্রয়োজন রয়েছে।
ধন্যবাদ গোয়েন্দা নিজামুলকে,
ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা।

Monday, July 8, 2019

ফারিহা

fariha
Fariha


আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে, আজকের তারিখে, ফেসবুক নামক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের কথা শুরু হয়েছিল। বারোটা মাস ধরে অনলাইনে এতো কথার পরও আমরা কখনও মুখোমুখি দেখা করার সুযোগ পাইনি। এই আমার দেখা প্রথম মেয়ে, যার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার ছয় মাসেরও বেশি হয়ে গেলো, কিন্তু এখনও আমার প্রেমে পড়েনি। জানি না ব্যাপারটা শুনতে কেমন লাগে। কিন্তু আমি নিজেই আজে তাকে সব সত্যি সত্যি করে বলে দিব। আর সহ্য হচ্ছে না আমার। আর কতো অপেক্ষায় থাকবো। আজ পর্যন্ত ছেষট্টিটা মেয়ের কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছি। তাদের মধ্যে একটাও আমার রুচির মতো ছিল না। এই জীবনে প্রথম একটা মেয়ে এতটাই পছন্দ হয়েছে, যে আমার নিজেও বিশ্বাস হচ্ছে না। সেও বাকিদের মতো নিজে নিজেই আমার প্রেমে পড়বে, এই অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমি নিজেই তার প্রেমে পড়ে গেলাম। আর দেড়ী নয়। এই সুযোগটা হাতছাড়া করা আমার জন্য খুব বিরাট এক বোকামি হবে।

এটাই চিন্তা করতে করতে বাসায় এলাম। আমাদের বাসা পুরাণ ঢাকার লালবাগ এলাকায়। আমি সবসময় দেড়ী করেই বাসায় আসি। এখন সময় প্রায় রাত সারে বারোটার মতো। ফোনের মধ্যে মোটেও চার্জ নেই। যতক্ষণ বাসায় থাকি, ততক্ষণ ফারিহার সঙ্গেই কথা বলতে থাকি। যখন বাহিরে বের হই, তখনও সারাদিন-সারারাত তার সঙ্গেই কথা বলতে থাকি। তাই দিন শেষে এক ফোঁটা চার্জও থাকে না। যতটুকু চার্জ দেয়া হয়, রাতেই দেয়া হয়। আজ তো আমার পাওয়ারব্যাংকের চার্জও শেষ হয়ে গেল। এতটাই কথা বলি আমরা সারাটা দিনে। বাসার মধ্যে ভাইয়া ছাড়া কেউও ফারিহার প্রসঙ্গে জানে না।

ভাইয়া বিদেশ থেকে আসার এক সপ্তাহ হলো মাত্র। এক সপ্তাহের মধ্যে পাঁচটা মেয়ে দেখে ফেলেছে। তাদের মধ্যে একটাও ভাইয়ার পছন্দ হয়নি। ভাইয়া আর আমার পছন্দ-অপছন্দ প্রায় একই রকম। ভাইয়া যখনও নিজের জন্য কিছু কিনতে যেতো, তেমনই একটা আমার জন্যও নিয়ে আসত। ভাইয়া এমন কিছু কিনত না, যেটার একটা আমার জন্যও নেয়া যাবে না। ভাইয়া আমাকে যতটা ভালবাসে, তার চেয়ে বেশি কেউ আমাকে ভালবাসতে পারবে কিনা, তা সন্দেহ। কিন্তু এতো ভালবাসা সত্বেও আমি কখনও ভাইয়ার অর্জনগুলোর ধারেকাছেও যেতে পারিনি। বাবা সবসময় ভাইয়ার ব্যাপারে একটাই কথা বলতেন, "পৃথিবীতে আকর্ষণীয় পুরুষ হয় দুই প্রজাতির; একটা হলো হ্যান্ডসাম, আরেকটা হলো স্মার্ট। আল্লাহ্ তা'আলার অশেষ রহমতের ফলে আমার বড় ছেলে তানজিল সেই অত্যন্ত সচরাচর তৃতীয় প্রজাতির, যে প্রজাতির পুরুষ সব দিক দিয়েই পরিপূর্ণ।" যখনও বাবা এই কথাটা বলতেন, তখন আমি নিজেকে খুবই অসহায় মনে করতাম। কারণ আমার মধ্যে উভয় গুণাবলির মধ্যে কোনটাই শুরু থেকে ছিল না ভাইয়ার মতো। আমি আজ যতটা স্মার্ট, তা ভাইয়ার দেয়াই শিক্ষা। দুর্ভাগ্যবশত, হ্যান্ডসাম হওয়ার রহস্য ভাইয়া তো কি, পৃথিবীর কেউও কাউকে শেখাতে পারবে না।

আজ বাসায় গিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে। কারণ সকালে চাচাতো ভাইরা আসবে। দুপুর তিনটার দিকে নাকি মেয়ে পক্ষের বাসায় পৌঁছাতে হবে। অর্থাৎ, আমাদের বাসা থেকে প্রায় একটার দিকে বের হতে হবে। শুনেছি তাদের পরিবারও আমাদের পরিবারের মতো খুবই উঁচু বংশের। তারাও তৎপরতা খুবই পছন্দ করে। তাদের ব্যাপারে শুনে আমাকে ফারিহার বাবার সেই ঘটনা মনে এসে পড়ল। ফারিহার বাবা একজন রিটায়ার্ড কর্নেল। তাই একটুও বিলম্ব সহ্য করতে পারেন না। ফারিহার জন্য এক সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার প্রস্তাব আসে। ছেলেটা নাকি মেন্স পারলরে রেডি হতে গিয়েছিল, যার কারণ তাদের প্রায় বিশ মিনিটের মতো দেড়ী হয়েছিল। এমন দেড়ী দেখে তার বাবা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হয়ে একটা প্রাক্তন কর্নেলের বাসায় আসতে এমন দেড়ী করেছো, তোমার কি মনে হয়? এটা কিছুই না? Listen to me, son. A soldier's job is to be punctual at any and all times; whether he's defending the country, or protecting his own image. Now, get out." এমনভাবে অপমান করে বিদায় করলো, যে আমিও শুধু শুনেই উনার ভক্ত হয়ে গেলাম। এমন বিচার-আচারের মানুষ আজকাল খুবই সচরচর। আজকাল তো মানুষ ট্রাফিক পুলিশের প্রস্তাবও সহজে ছাড়তে চায় না, উনি তো একজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাকেও ছাড় দিলেন না।

অবশেষে বাসায় পৌছে গেলাম। এখন তাড়াতাড়ি হাত-মুখ ধুয়ে খেয়ে নিই। খাওয়াদাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অধিকতর মাত্রায় ঘুম পেল। আর স্বজাগ না থেকে ঘুমিয়ে পড়লাম। ফোনটা চার্জ দেয়ার কথা খেয়াল ছিল না। ফোনটা চার্জের অভাবে সারারাত বন্ধই ছিল। রাত তিনটা পর্যন্ত ফারিহা জেগে ছিল আমার জন্য। অপেক্ষায় ছিল আমার অনলাইন হবার। ঘুমোনোর আগে ঠিক তিনটার দিকে আমাকে টেক্সট করলো, "এই শুনো! আমি আজ সারাটা দিন ব্যস্ত থাকবো। ছেলে পক্ষ আমাকে দেখতে আসবে ঠিক তিনটার দিকে। তুমি আমাকে এই সময়ের মধ্যে কোনো টেক্সট দিও না। আমি অবসর পেলে নিজেই তোমাকে টেক্সট দিবনে।"

ফোনে চার্জ না থাকার কারণে সকাল সারে এগারোটায় উঠে ফোন চেক করাতে তার মেসেজ পাইনি। যেই ফোনে চার্জ দিতে গেলাম। এমন সময়েই বিদ্যুৎ চলে গেল। ট্রান্সমিটার পুরে যাওয়ার ফলে বিদ্যুৎ ফিরতে প্রায় দুপুর দুইটা বাজবে। এটা শুনেই আমি ফোনে চার্জ দেয়ার জন্য পাগল হয়ে গেলাম। ফারিহার সঙ্গে পাঁচটা মিনিট কথা না বলে থাকতেই পারি না। মনে হয়, জীবনটা কেমন খালি খালি হয়ে গিয়েছে। এমন অস্থিরতার মাঝে মাথাটাও ঠিকমতো কাজ করে না। আমি সকালের নাস্তা না করেই, আমার বন্ধু সাকিবের বাসার দৌড় দিলাম। চিন্তা করলাম তার বাসায় ফোনটা চার্জ দিয়ে নিব। তাহলে অন্তত পাঁচটা মিনিট তো কথা বলতে পারব। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সাকিবের বাসায় পৌঁছানোর পর আন্টির কাছ থেকে জানতে পেলাম, সে বাসায় নেই। আমার আসার কিছুক্ষণ আগেই বের হয়ে গিয়েছিল। তো আমি তার অপেক্ষায়, তার বাসার নিচের চায়ের দোকানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময়ই আমার বড় চাচা সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমাকে চায়ের দোকানে দেখে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, "রাফি! এখানে কি করছো? আজকে না একটার দিকে বের হতে হবে?" আমি উত্তরে বললাম, ",জ্বী চাচ্চু! কিন্তু এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বন্ধুর বাসায় চার্জ দিতে এসেছিলাম।" উনি এটা শুনে আমাকে বললেন, "বাবা, একটা দিন মোবাইল না চালালে কি হয়, বলো? একটা দিনই তো। রাতে বাসায় এসে চার্জ দিয়ে দিও।" আমি উনাকে বললাম, "চাচ্চু, কিছু জরুরি কাজের জন্য চার্জ দেয়ার দরকার ছিল।" এটা শুনে উনি জিজ্ঞাসা করলেন, "কি জরুরি কাজ, বাবা? অন্য কোথাও যাওয়ার প্ল্যান আছে নাকি?" আমি বললাম, "না! না! তেমন কিছু না। একটা ফ্রেন্ডকে এসাইনমেন্টের কথা জিজ্ঞাস করব। আর কিছু না।" এটা শুনে উনি বললেন, "তাহলে, এই নাও আমার ফোন। আমার দিয়ে কল করে জিজ্ঞাস করে নাও।" এটা শুনে আমি বললাম, "কিন্তু চাচ্চু, ওর ফোন নাম্বার তো আমার মুখস্থ নেই। সেটা তো আমার এই ফোনে।" এটা শুনে উনি বললেন, "তাহলে বাবা, আর কিছু করার নেই। এখনের জন্য চলো। রাতে ফোনে চার্জ দিয়ে একবারেই কল দিও। তাড়াতাড়ি চলো, বাবা! সাদমান, অন্তর আর অনন্ত কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বে।" আর কোনো ধরনের বাহানা না দিতে পারায়, উনার সঙ্গেই বাসায় চলে গেলাম।

বাসায় এসে, নাস্তা করে, গোসল করে, দুপুর সারে বারোটার মধ্যে ঝটপট রেডি হয়ে গেলাম। বের হওয়ার আগে ভাইয়া আমাকে বললো, "শুনেছিস, নাকি? মেয়েটার নাকি কোনো ছোট বোন নাই! বাবা-মার একমাত্র। সরি ভাই, এইবার তোর জন্যও একটা নিতে পারব না বোধহয়।" আমি একথা শুনে, হেসে জিজ্ঞাস করলাম, "ভাইয়া, তাহলে কি এই মেয়েটাও বাদ?" ভাইয়া উত্তরে বললো, "না! বাদ কিনা, এটা এখন কিভাবে বলবো? ঐ কাপড় ধোয়ার TVC-এর কথা মনে নেই? 'ব্যবহারের পরেই বিশ্বাস' কি? ঠিক বললাম না?" আমি আবার হেসে বললাম, "ঠিক বলছো, ভাইয়া! একদম ঠিক!" আমার অল্প প্রাণ হাসিটা দেখে ভাইয়া বুঝে গেল আমি কিছু নিয়ে চিন্তায় আছি। আমাকে চিন্তার বিষয় জিজ্ঞাস করাতে, আমি সবকিছু খুলে বললাম। আমার সমস্যার কথা শুনে, ভাইয়া বললো, "চিন্তা করিস না। রাতে যখন এতো সময় পরে তোর সঙ্গে কথা হবে, তখন দেখবি মেয়েটাও যে তোর ছাড়া থাকতে পারে। সেখান থেকেই তোর প্রেমের যাত্রা শুরু করে ফেলিস। এখন চল্! দেড়ী হলে আবার ঝামেলা হয়ে যাবে।" কথাগুলো শুনে অনেক উৎসাহের সঙ্গে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়লাম।

আম্মু, বাবা এবং চাচা-চাচিরা অন্য গাড়িতে গেলো। আমি যে গাড়িতে বসেছিলাম, সেই গাড়িতে ছিল; ভাইয়া, ঘটক এবং আমার চাচাতো ভাইরা। প্রত্যেক বারের মতোই এবারও আমি গাড়ির পিছনের সিটে বসলাম আমার তিন চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে। গাড়ি ছেড়ে দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই ঘটকটা মেয়ের অসংখ্য গুণ গাওয়া শুরু করে দিল। আমি তা শুনে, মনে মনে বলছিলাম, "আরে ভাই, মেয়েটা দুনিয়ার যতই যা হোক, আমার ফারিহার তুলনায় কি?" এটা ভাবতে ভাবতে চেহারায় এক মুচকি হাসি আপনাআপনি এসে পড়ল। অন্তর আমার কানে ফিসফিস করে জিজ্ঞাস করলো, "কিরে? তোর নতুনটার খবর কি?" আমি উত্তরে বললাম, "সকাল থেকে কথা হয়নি মোটেও। ফোন তো চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে, তার উপরে আবার বাসায় বিদ্যুৎও ছিল না সকাল থেকে।" এটা শুনে সাদমান বললো, "ওহ্! তো এই জন্যই তো বলি আজ তোর চেহারার চমক কই গেলো!" আমি বললাম, "হ্যাঁ ভাই, আর বলিস নারে!" আমার অবস্থা দেখে সাদমান নিজের ফোন আমার হাতে দিয়ে বললো, "নে ভাই, লগিন করে, তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে নে।" আমি তার এই অফারটা শুনে কিছুক্ষণ ভাবলাম। ভাবলাম, আর কতটাই দূর হবে মেয়ে পক্ষের বাসা! এই অল্প কিছু সময় কথা বললে, আর কথা শেষ হবে না। ফারিহার সঙ্গে কথা বলার মাঝেই যদি হঠাৎ কথা থামাতে হয়, তাহলে অস্থিরতা আরো বৃদ্ধি পাবে। অনেকক্ষণ পরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি, এখন হাল ছেড়ে দিল চলবে না। আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে তো পৌঁছেই যাব। একথা চিন্তা করে বললাম, "না ভাই, থাক্! লাগবে না।" এটার পর প্রায় এক ঘটনারও বেশি হয়ে গেলো, কিন্তু আমরা এখনও পৌঁছাইনি। আমি বিরক্ত হয়ে ড্রাভারকে জিজ্ঞাস করলাম, আর কতক্ষণ লাগবে। ড্রাইভার বললো, আরো বিশ থেকে পঁচিশ মিনিটের মতো লাগবে, তার চেয়ে বেশি নয়। তখন মনে আসল, যে মেয়ে পক্ষের বাসায় যেতে তো প্রায় দুই ঘণ্টা লাগার কথা। তখনই আমি ড্রাইভারকে জিজ্ঞাস করলাম, "আচ্ছা, আমরা ঠিক কোন এলাকায় যাচ্ছি?" ড্রাইভার বললো যে আমরা উত্তরায় যাচ্ছি। উত্তরার কথা উল্লেখ করাতে, আমার আবার ফারিহার কথা মনে পড়ে গেলো। ফারিহা থাকে উত্তরার ছয় নং ব্লকের ছয় নং বাসায়। তার ব্যাপারে চিন্তা করতে করতে ভাবলাম, আজকে এলাকাটা ভাল করে চিনে যাই। পরে যখন ফারিহার সঙ্গে দেখা করতে আসব, তখন এলাকা চিনতে অতিরিক্ত খাটতে হবে না। আমি আবার এই কথা চিন্তা করতে করতে ভাবলাম, ফারিহাকে বলে দেখি, যে আমি উত্তরাতে এসেছি। তাকে সারপ্রাইজ দিব। একথা ভেবে সাদমানের কাছ থেকে তার ফোনটা চেয়ে আমার একাউনটে লগিন করলাম। নেটওয়ার্কে সমস্যার কারণে লোড হতে অনেক সময় নিচ্ছিল। পুরোপুরি লোড হতে হতে আমরা প্রায় পৌঁছে গেলাম। তখন আমরা ছিলাম পাঁচ নং ব্লকের কাছে। আমি ড্রাইভারকে জিজ্ঞাস করলাম, আর কতক্ষণ লাগবে। তখন ড্রাইভার বললো, আর দুই মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব। এতক্ষণে পুরোপুরি লোড হয়ে গেলো। আমি আমার ইনবক্সে ঢুকতে ক্লিক করাতে, আবার লোডিং শুরু হলো। আমি বিরক্ত হয়ে ড্রাইভারকে আবার জিজ্ঞাস করলাম, এটা কয় নম্বর ব্লক। ড্রাইভার বললো, এটা ছয় নং ব্লক। সেই মুহূর্তে আমার মনে কিছু টান দিল। ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে বললো, এসে পড়েছি আমরা। তখন সময় ছিল ঠিক ২:৫৯। তখন সবাই গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে উনাদের বাসায় নক্ করলাম। আমি সবার পিছনে, হাতে সাদমানের মোবাইল নিয়ে, দাঁড়িয়ে ছিলাম। দরজা খুলে আমাদের ভিতরে আমন্ত্রণ করা হলো। মেয়ের বাবা আমাদের জিজ্ঞাস করছিলেন, যে আমাদের পথ চিনতে কোনো কষ্ট হয়েছিল কিনা। তখনই ঘটকটা আগে গিয়ে বললো, "কি বলেন এসব? আমি থাকতে আবার রাস্তা চিনতে কিসের কষ্ট?" এটা বলেই হাসতে শুরু করে দিল। সবাই বসে কথা বলা শুরু করলো, আর পাশ দিয়ে অনন্ত আমার কানে ফিসফিস করে বারবার বলছে, "চল্ ভাই, বাহিরে আয়। সকাল থেকে সিগারেট খাইনি। পাঁচ মিনিটের জন্য আয়।" আমি মানা করাতে, আমাকে তার ফোনে লগিন করতে দিবে বলে লোভ দিয়ে নিয়ে গেলো। ওরা তিনজন টংয়ের একপাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল, আর আমি তার ফোনে লগিন করে তাড়াতাড়ি ইনবক্সে ঢুকলাম। ইনবক্সে ঢুকার সাথে সাথে দেখি তার টেক্সট। টেক্সটে লেখা ছিল, আজ তিনটার দিকে তার বাসায় ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে। তখন আমার অন্তরের সেই ভয় বাড়তে লাগল। আমি তখন আমার চাচাতো ভাইদের জিজ্ঞাস করলাম, এটা ছয় নং ব্লকের কয় নম্বর বাসা। তাদের কারোও খেয়াল ছিল না, তাই আমি তাড়াতাড়ি তাদেরকে নিয়ে ফেরত গেলাম। বাসায় ঢুকেই দেখি নিল রঙের সেলওয়ার কামিজ পড়া এক রূপসী মেয়ে এসে ভাইয়ার সামনে বসে গেলো। মেয়েটার চেহারা ঢাকা ছিল ওড়না দিয়ে। আমি একটু কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম তার গোলাপি ঠোঁট। তার কমল হাতে লাগানো মেহেদি। মেয়েটা ঠিক তেমনই সেলওয়ার কামিজ পড়া ছিল, যেটা আমি কিছুদিন আগে ফারিহাকে দিয়েছিলাম তার জন্মদিনের উপহার হিসেবে। ছয়টা ঘণ্টা, পাঁচটা মার্কেট খুঁজে, পেয়েছিলাম এমন ড্রেস। বাংলাদেশের টপ ব্র্যান্ডের, লিমিটেড এডিশন ডিজাইনের মধ্যে, এই একটাই পেয়েছিলাম নিল রঙের। ফারিহা ওয়াদা করেছিল, এটা সেদিন পড়বে, যেদিন আমাদের প্রথম দেখা হবে। যেখান থেকে কিনেছিলাম, সেখান থেকে তো গ্যারান্টি দিয়ে বলেছিল, এমন ড্রেস এই সমগ্র পৃথিবীতে আরেকটা নেই। কিন্তু সেই মুহূর্তে আমার মনের একটাই ইচ্ছা ছিল, আরে সেটা হলো, "এমন ড্রেস যাতে বিশ্বের প্রত্যেক জায়গায় পাওয়া যায়।" কিন্তু আমার শত ইচ্ছার পরও, কখনও বাস্তবতা পাল্টাতে পারবে না। আমি জানতাম ঘটনাটা কিরূপ বিরাট পর্যায়ে ঘটেছে। আমি জানতাম ইহা এড়ানোর কোনো উপায় আমার হাতে নেই। শুধু ভাইয়ার পাশে চুপচাপ বসে সব সহ্য করতে হবে। আমি কখনও তার কাছে ভাইয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলিনি। আজ তার চোখের সামনে বসে আছে ভাইয়া, আর ভাইয়ার সামনে ফারিহা। বাবা বললো, ছেলে এবং মেয়ে উভয়কেই কিছুক্ষণ একা কথা বলার সুযোগ দেয়া হোক্। আমি সবার আগে দাড়িয়ে, দ্রুত গতিতে হাঁটা শুরু করলাম। তখনই ভাইয়ার আমার হাতটা ধরে জিজ্ঞাস করলো, "তুই কোথায় যাচ্ছিস? তুইও আমার সাথে থাকবি এখানে।" আমি বেশি কিছু না বলেই আবার বসে পড়লাম। বাকি সবাই ভিতরের রুমে চলে গেলো। আমার মাথায় তখন অসংখ্য হাবিজাবি ঘুরছিল। ভাইয়া আমার চেহারার মরা মরা ভাব দেখে, আমাকে জিজ্ঞাস করলো, "কিরে? তোর চেহারার বারোটা বেজে আছে কেন? কোনো সমস্যা?" আমি উত্তরে বললাম, "না ভাইয়া, এতো লম্বা যাত্রা করার কারণে একটু মাথা চক্কর দিচ্ছে।" এটা শুনে ভাইয়া বললো, "আচ্ছা দাড়া, উনার কাছে জিজ্ঞাস করে দেখি বাসায় কোনো ওষুধ আছে কিনা।" আমি বললাম, "না ভাইয়া! ওষুধের কোনো দরকার নেই। এক গ্লাস পানি হলেই চলবে।" এটা শুনে ফারিহা বললো, "দাঁড়ান! আমি নিয়ে আসছি।" ফারিহার নিজের হাতে আমাকে পানি দিয়ে গেলো। কিন্তু একবারও আমার চোখের দিকে তাকায়নি। তার এই আচরণ দেখে নিশ্চিত হয়ে গেলাম, সেও আমাকে চিনতে পেরেছে। আজ ভাইয়া নিজের নিল রঙের কনট্যাক্ট লেন্স পড়েছিল। আমি আজ প্রথমবার এমন এক মেয়ে দেখলাম, যে ভাইয়ার দিকে একাধিকবার তাকিয়েও স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছে। ফারিহা আজ পর্যন্ত সাতানব্বইটা প্রস্তাব ফেলে দিয়েছে। তার মধ্যে প্রেমের প্রস্তাব প্রায় ষাটটা এবং বাকিগুলো বিয়ের প্রস্তাব। আমি জীবনে প্রথমবার ভাইয়ার পাশে বসেছিলাম, এই আশা নিয়ে যে মেয়েটা, তাকে অপছন্দ করবে। অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে, বাকি সবাই ফিরে আসা শুরু করলো। ছেলে এবং মেয়ে উভয়কে তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জিজ্ঞাস করা হলো। ফারিহা বললো, তার কিছুদিন চিন্তা করতে সময় দিতে হবে। ভাইয়া তার কথায় সম্মতি জানানোতে সবাই বাসার ফেরত যাওয়ার জন্য বের হলাম।

সারাটা পথ নীরবতায় কাঁটালাম। কি আর করবো? আর কিছু বলার ছিলই না। বাসায় গিয়ে ফোনটা একঘন্টা চার্জ দেয়ার পরে অন করলাম। অন করেই ইনবক্সে ঢুকলাম।
তার টেক্সট দেয়া। তার টেক্সট দেখেই আমাদের কথা শুরু হলো;

- অবশেষে অবসর পেলাম! কি খবর তোমার?
- আলহামদুলিল্লাহ্! তুমি কেমন আছো?
- আলহামদুলিল্লাহ্! অনেক ভাল।
- বাহ্! এতো আনন্দ কীসের? ছেলে পছন্দ হলো নাকি?
- Not exactly! কিন্তু ছেলের ছোট ভাইটা মারাত্মক ছিল।
- ওহ্! তাই নাকি?
- হ্যাঁ!
- তাহলে তোমার বাবাকে বলো, ছোট টার সঙ্গেই তোমার বিয়ে দিয়ে দিতে।
- এতো সহজ না গো! বাবা তো চায় প্রতিষ্ঠিত ছেলে। ওর ছোট ভাইটা তো মনে হয় এখনও গ্র্যাজুয়েশনই শেষ করেনি।
- তাহলে, এমন ছেলেই পছন্দ করলা কেন?
- মন কি এত কিছু বুঝে, বলো? যার সঙ্গে হারিয়ে যাওয়ার বায়না ধরে বসে, তাকেই তো চিরকাল খুঁজে বেড়িয়ে যায়। অন্য কারো অনুসন্ধানে তার কোনো কিছু, না আসে, না যায়।
- তুমি কবে থেকে থেকে সাহিত্যিক হয়ে গেলা?
- আজ বিকাল থেকেই! দেবদাসের মতো মনে হচ্ছে নিজেকে।
- কেন? মদ সেবন করেছো?
- না গো! জীবনের নেশার তুলনায় এই মদ কি জিনিস? মদ তো তারা পান করে, যারা জীবনের নেশা সহ্য করতে পারে না। আমি তো ইহা নিয়েই অনেক সন্তুষ্ট আছি।
- যা ই হোক! আমাকে পানি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। তখন মাথা চক্কর দেয়ার কারণে ঠিকমতো ধন্যবাদ জানাতে পারিনি।
- ধন্যবাদের কিছু নেই। এক গ্লাস পানিই তো!
- তুমি আমাকে ওয়াদা করেছিলা, আমার দেয়া ড্রেসটা সেদিন পড়বে, যেদিন আমাদের প্রথম দেখা হবে। সেটা আজ পড়ে, এভাবে ছেলে পক্ষের সামনে আসাটা কি ঠিক হয়েছিল? তোমার ওয়াদাটা তো রক্ষা করতে পারলা না।
- কীভাবে পারলাম না? আজ তো আমাদের প্রথম দেখা ছিল, আর আজকের দিনই আমি ড্রেসটা পড়লাম। তাহলে তুমিই বলো, কীভাবে ওয়াদা রক্ষা করতে পারলাম না?
- ড্রেসটা যে উদ্দেশ্যে পড়েছিলা, আর যে উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে, দুটো ভিন্ন বিষয়। তুমি ড্রেসটা পড়েছিলা ছেলে পক্ষের সামনে উপস্থাপনের জন্য, আমার সামনে নয়।
- তোমার মতো মেধাবী পুরুষের মুখ থেকে যখন এমন মূর্খতা সম্পন্ন কথা শুনতে পাই, তখন খুবই অবাক লাগে। মনে হয় জেন, রাফি শুধু একটা নয়, তার আরেকটা মূর্খ রূপও রয়েছে।
- What does that supposed to mean?
- It means, I knew that you were coming from the get go.
- কীভাবে? আমার আগমনের সংবাদ কোথায় পেলা?
- গতকাল ঘটকটা বিকেল বেলায় আমাদের বাসায় এসেছিল। সে ছেলের যে কয়টা ছবি দেখল, তার মধ্যে অধিকাংশ ছবিতে তুমি ছিলে। আমি জিজ্ঞাস করাতে আমাকে বললো যে তুমি ছেলের আপন ছোট ভাই। তাই তোমার সঙ্গে প্রথম দেখা উপলক্ষে ড্রেসটা পড়ে ছিলাম।
- Damn! আমার জন্য এতো ঝামেলা! I'm pleasantly surprised! Thank you.
- নিজের দেয়া ড্রেস পড়ার জন্য তো “Thank you" বললা ঠিকই, কিন্তু এতো কষ্ট করে যে তোমার জন্য তোমার পছন্দের কাচ্চি রান্না করলাম, সেটার ব্যাপারে তো কিছুই বললা না!
- Wait! কাচ্চি তুমি রান্না করেছিলা?
- জ্বী হ্যাঁ! এজন্যই তো টেক্সটে বলেছিলাম যে সারাদিন ব্যস্ত থাকবো।
- বুঝতে পেরেছি! একা একা রান্না করতে পারলা?
- একা একা না! আম্মু তো ছিলই সাহায্য করতে।
- তাহলে, আন্টিকে আমার দিক থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে দিও!
- তুমি অনেক পচা!
- আজকে জানলা?
- জ্বী!
- আচ্ছা, শুনো!
- না! শুনবো না।
- অনেক জরুরি তো।
- হোক্ জরুরি! জরুরি হলেও তোমার জন্যই হবে, আমার জন্য না।
- যদি আমি বলি, আমাদের উভয়ের জন্যই জরুরি?
- যদি এমন কিছুই হয়ে থাকে, তাহলে বলো।
- এখন সময় রাত ১১:৩৬! ঠিক একটা বছর আগে এই মুহূর্ত থেকে আমাদের কথা শুরু হয়েছিল।
- বাহ্! তুমিও সময়টা মনে রাখলা?
- না! খুঁজে বের করলাম। কয়েকমাস আগে আমাদের চ্যাট হিস্টরি ঘাটতে ঘাটতে পেয়েছিলাম।
- ওহ্ আচ্ছা! এতটাই বলার ছিল?
- না! আরো কিছু কথা আছে।
- আচ্ছা, শুনো! আমারও কিছু বলার ছিল।
- আচ্ছা, বলো।
- না থাক্! তুমি বলো।
- Ladies first.
- আচ্ছা! I love you. I want to be yours till the end of time. তোমার দেয়া এই ড্রেস যেভাবে আমার শরীর সঙ্গে মিশে যায়, সেভাবেই আমার আত্মাকে তোমার আত্মার সঙ্গে মেশাতে চাই।
- কি বলছ এসব? পাগল হয়ে গিয়েছ তুমি? আমার ভাইয়া আজ বিকালেই তোমায় দেখে এলো, আর এখন তারই ছোট ভাইকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছ? Are you out of your mind?
- তোমার মনে আমার জন্য কোন ধরনের অনুভূতি নেই?
- থাকলে তো আমি নিজেই বলতাম।
- না! বলতা না। আমি তোমাকে ভাল করেই জানি।
- যদি এত কিছুই জানো, তাহলে ভাইয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দাওনি কেন?
- আমি নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম।
- কিসের ব্যাপারে?
- তোমার মনে কি আছে, সেটার ব্যাপারে।
- এসব করে কি নিশ্চয়তাটা পেয়েছ তুমি?
- যখন তোমাকে পানি দেয়ার জন্য তোমার কাছে এসেছিলাম, তখন তোমার চোখে দেখতে পেলাম তোমার প্রকৃত অনুভূতি। আমি ভাল করেই জানি তোমার উপর আজ মারাত্মক পরিমাণের অত্যাচার গিয়েছে। এই অত্যাচারের বাকি অংশটুকুর কারণেই তুমি এই মুহূর্তে কান্না করছ।
- তুমি কিভাবে জানো আমি কান্না করছি কিনা?
- কারণ আমিও তোমার যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কান্না করেই যাচ্ছি।
- কিন্তু কেন? কেন করছো এমন? তুমি জানো না, আমাদের ভবিষ্যতের সকল সম্ভাবনা শেষ হয়ে গিয়েছে?
- আমি এসব জানি বলে কাঁদছি। আমি এই কঠিন সত্য নিতে পারছি না।
- সব ভুলে যাও! মনে করে নাও রাফি নামক কোনো ব্যক্তিকে তুমি কখনও চিনতে না।
- ঠিক আছে। ধরে নাও, আমি কোনোভাবে তোমাকে ভুলে গেলাম। কিন্তু তুমি কি আমাকে ভুলতে পারবে?
- তোমার জীবনে আমার ভুমিকা থাকাটা পুরোপুরি বৃথা।
- আমার অনুভূতিগুলোকে এভাবে মাটি করে ফেলবা?
- হ্যাঁ! এটাই করতে হবে। তোমার অনুভূতিগুলোকে মাটি করে, নিজের অনুভূতিগুলোকে সেটার মধ্যে দাফন করে দিব।
- তুমি চাইলেই কিছু করতে পারো।
- কিছু করার দায়িত্ব কি শুধু একান্ত আমার?
- আমার পরিবারের সামনে তোমাকে উপস্থাপন করার উদ্দেশ্যেই আজ তোমার কাছে আমার মনের কথা প্রকাশ করলাম। নাহলে আরো আগেও কখনও বলতে পারতাম।
- শুধু আমাকে উপস্থাপন করাতেই যদি হয়ে যেত, তাহলে আমি এতদিন এভাবে অপেক্ষায় থাকতাম না, অনেক আগেই তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসে পড়তাম।
- তুমি তোমার ভাইয়াকে বলে দেখো। সে তোমার সব কথা শুনে।
- আমার ভাইয়া আমার প্রত্যেকটি চাহিদা, আমার বলার আগেই পূরণ করেছে। জীবনে প্রথমবার ভাইয়া কিছু চাচ্ছে, সেটা আমি কি করে কেড়ে নেই, বলো?
- তুমি না বললে, আমি নিজেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিব।
- হ্যাঁ। সেটাই করো। প্রস্তাব ফিরিয়ে দাও। আমি তোমাকে নিজের করতে না পারলে, নিজের ভাবি হিসেবেও দেখতে চাই না। আর অবশ্যই ভাল একটা কারণ দিও, যাতে গতবারের মতো তোমার ফুপ্পি তোমাকে থাপ্পড় না মারতে পারে। ভাইয়া তোমাকে বিয়ে করতে আগ্রহী, তাই আমি ভাইয়াকে মানা করতে পারব না। আজ বাসায় ফেরার পর ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞাস করলো, "তোর কাছে মেয়েটা কেমন লেগেছে?" আমি বললাম, "ভাইয়া, বিয়ে তুমিই করবা। আমার পছন্দ-অপছন্দ দিয়ে কি যায় আসে?" ভাইয়া বললো, "এতদিনের মধ্যে মনে হচ্ছে, ভাল একটা মেয়ে দেখতে পেলাম। তার তরফ থেকে হ্যাঁ থাকলে, আমার দিক থেকেও হ্যাঁ।" এটা শুনার পর থেকে আমি চরম পরিমাণের দুশ্চিন্তায় পড়ে গলাম। তাই তোমার কাছে বিনতী করছি, ভাইয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দাও আর আমাদের জীবন থেকেও সরে যাও।

এসব বলার পরে, তার রিপ্লাইয়ের জন্য সারাটা রাত অপেক্ষায় স্বজাগ ছিলাম। কিন্তু তার তরফ থেকে কোনো রিপ্লাই পাওয়া যায়নি। পরের সকালে তার বাবা ফোন করে জানিয়ে দিল, তার মেয়ের তরফ থেকে না আছে। এই সংবাদ শুনে আনন্দ না পেয়ে থাকলেও, মনের শান্তি পেয়েছিলাম প্রচুর পরিমাণে। শান্তি ছিল মূলত দুই কারণে। প্রথম কারণ; এখন আর ফারিহাকে আমার ভাবি হিসেবে দেখতে হবে না। আর দ্বিতীয় কারণ; অবশেষে আমার প্রেমে এমন এক মেয়ে পড়ল, যে ভাইয়ার দিকেও আকর্ষিত হয়নি। আসলে, আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, তার প্রতি আমার যে অনুভূতি ছিল, সেটা ভালবাসা ছিলই না। সেটা ছিল এক ধরনের জিদ। যৌবনকালে এমন প্রায়ই হয়। কোনো মেয়ের চোখে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখার সন্তুষ্টি অতুলনীয়। মাঝেমধ্যে আমারও মন চায়, তার দেহের সুবাসে নিজেকে আবৃত করে নিতে। মাঝেমধ্যে আমারও মন চায়, তার কেশের তলে বসে দিন কাটিয়ে ফেলি। মাঝেমধ্যে আমারও মন চায়, তার গলার মিষ্টি স্বরে, তার কোলে শুয়ে বিশ্রাম করি। মাঝেমধ্যে আমারও মন চায়, তার সেই দুটো গাঢ় বাদামি চোখের দিকে তাকিয়ে সারাদিন-সারারাত কাটিয়ে ফেলি। তার সেই কোমল হাতের আঙ্গুলগুলোর মাঝে আমার হাতের আঙ্গুলগুলো রেখে, তার কপালের উপর আমার ঠোঁট রেখে প্রতিটা বেলা পার করতে চাই।

জানি না, সে এখন কেমন আছে, কোন অবস্থায় আছে। কিন্তু আশা করি সর্বদা ভালই থাকবে। হতে পারে কিছু সময় পর ফারিহার জায়গায় অন্য কোনো 'সে' আসবে আমার জীবনে। কিন্তু তাহারই অপেক্ষায় এখন বেঁচে থাকতে হবে।

Sunday, July 7, 2019

Witnessing Insanity

Not only was it my first time witnessing a murder, but also my first time seeing someone doing it with a straight face. His eyes were focused on the man hanging by the rope while his face kept the same expression of boredom from the moment I saw him. It was like a man trying to tell two stories at the same time without mentioning either of them. Was he an angel sent from above, or was he a demon that crawled up from the depths of hell. Who knows? It no longer mattered, as it no longer bothered me; neither emotionally, nor morally. When I looked in his eyes again, I saw the eyes of a man dedicated to his work more than anything. I saw a man who loved his work even if his work was widely hated. I don't know what was going through my mind, but strangely enough, I was having fun. I was having fun seeing a man being hung from a ceiling fan in his own apartment. I was having fun seeing a man struggling for his life, not even able to cry out. I was indeed having fun, enjoying the view and losing my mind. If was in that very moment, I stopped judging people for what they do. Instead, I started judging them for the things reasons they do such things.