Monday, December 16, 2019

যাযাবর মন

খাগড়াছড়ি এলাকার কিছু বিশেষ পাহাড়-পর্বত দর্শনের জন্য গাড়িতে করে সকাল সকাল এসে পড়লাম। বাসায় থেকে থেকে এই সাদামাটা জীবন যাপন করে বিরক্তি অনুভব করছি। নিতী-নৈতিকতার পিঞ্জরে আর এক মুহূর্তও জীবনের প্রকৃত আনন্দ-উল্লাস উপভোগ করতে পারছি না। কি এই জীবন, যদি উপভোগ করতে না পারি? তাই আজ এই পাহাড়ের কোনায় দাঁড়িয়ে একটা বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার চিন্তা করছি। শহরের উত্তপ্ত গ্রীষ্মকালীন হাওয়ায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তাই এমন কোথাও আসতে হলো, যেখানে সিদ্ধান্তের এক বিশেষ স্বাধীনতা রয়েছে। এখানে রয়েছে মুক্তভাবে চিন্তার এক আলাদাই সুযোগ। এই সুযোগে আজ সিদ্ধান্ত নিলাম পরক্রিয়া করার।
শুধু একটা সিদ্ধান্ত করবার জন্য এতো দূরে আসা অনেকের কাছেই ভীষণ মাত্রার বোকামি মনে হতে পারে, তবে তাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের কাছে সেই জিনিসের অভাব, যা আমার কাছে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত; আর সেটা হলো টাকা।
ধনী এবং ক্ষমতাসীন পরিবারে জন্ম নেওয়ার সবচাইতে বড় সুবিধা হলো অঢেল পরিমাণ টাকার মালিক হওয়া। এতো টাকার মালিক হওয়া অনেকের স্বপ্ন। আমার জন্ম এবং বংশপরিচয় আমাকে এই বিশেষ সুবিধা উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছে। তবে এ সকল সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতাও অবশ্যই রয়েছে। আমার অবস্থা মূলত সেই লোভী লোকটার মতো যে দিনরাত শুধু স্বর্ণের স্পর্শ পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করতো। যেই মুহূর্তে তাকে আশীর্বাদ দেওয়া হলো, তার খুশির মাত্রা আকাশ ছুঁয়ে দিল। তার আশীর্বাদ ছিল; সে যা স্পর্শ করবে, তা স্বর্ণে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। কিন্তু নিজের কন্যাকে আদর করতে গিয়ে যখন তাকেও স্বর্ণে রূপান্তরিত করে ফেললো, তখন সে বুঝতে পেল, সে যেটাকে আশীর্বাদ বলে খুশি হচ্ছিল, সেটা আসলে অভিশাপ ছিল। তাকে অভিশাপ দেওয়া হয়েছিল তার লোভ দূরীকরণের জন্য, কিন্তু আমার ধনসম্পত্তি কি আদতে আমার জন্য আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ, তা আমার জানা নেই। ছোটবেলায় শোনা গল্প নিয়ে এতো বছর পর নিজেকে যাচাই করছি। আমি কি আদৌ একজন পরিপূর্ণ সুখী মানুষ? আমি কি আদৌ নিজেকে পুরোপুরি জীবিত একজন মানুষ হিসেবে দাবি করার যোগ্য?
মূলত এই প্রশ্নগুলির উত্তর অনুসন্ধান করার জন্যই এই স্থানে আসা। উত্তর হয়তোবা আজকে নাও পেতে পারি, কিন্তু যেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলছি, তা অবশ্যই বাস্তবায়নের চেষ্টা আজ রাত থেকেই শুরু করবো। কিন্তু তা এখানে করবো না; করবো শহরে ফিরে। কারণ দূরে কোথাও পরক্রিয়া করা একটা নিরাপদ সিদ্ধান্ত হলেও, এতে পরক্রিয়া করার প্রকৃত মজা উপস্থিত নেই। একই শহরে, আশেপাশের কোনো এলাকার, তাও আবার সুপরিচিত লোকদের মাঝে দেখা করা, ঘোরাফেরা করা এবং সবার সামনে নির্লজ্জভাবে মেলামেশার মধ্যেই রয়েছে পরক্রিয়ার আসল রস। আর এসব আরো অনেক বেশি আনন্দদায়ক মনে হয়, যখন মনে পড়ে আমার স্ত্রী নিজেই এই গোটা শহরের একজন অত্যন্ত বিখ্যাত নেত্রী এবং সাধারণ জনগণের কাছে অত্যন্ত কুখ্যাত একজন সন্ত্রাসী।
ধনী এবং ক্ষমতাসীন এক পরিবারের সদস্য হয়ে জন্ম নেওয়ার এই একটাই অসুবিধা। আমার বিয়ের সময় আমার মত ঠিকই নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু প্রশ্নটা ছিল, "দেখ, এদের মধ্যে কোন নেত্রীকে পছন্দ হয়?"
উত্তর দেওয়ার পূর্বে আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম, "এদের বাহিরে কাউকে বাছাই করা যাবে না?"
আমার প্রশ্নের উত্তর পাবার এই ছয়টা বছর গেল। এখনও সেই উত্তর মাথায় ঘুরে। আমার বাবা আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন, "এই প্রশ্নের উত্তর তুই নিজেও ভাল করে জানিস।"
হ্যাঁ! আমি সবই ভাল করে জানি। দুটো পরিবার এভাবে আত্মীয়তার মাধ্যমে একত্রিত হলে এতে উভয় পক্ষের বিশেষ স্বার্থ পূরণ হবে। আমার একার এখানে কিছুই বলার মতো নেই। শুধু তাদের দেখানো কটির মধ্যে একজনকে বেছে নেয়াই ছিল একমাত্র করণীয়। তাই এমন এক পাত্রী বাছাই করলাম, যে স্বভাবত বদমেজাজি এবং নিতান্ত লম্পট এক মহিলা।
আমার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে বিশেষ কিছু কারণ ছিল। প্রধান কারণ ছিল তার যাযাবর স্বভাব এবং চরিত্রহীন আচরণ। তাকে দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারতো, সে কত বড় মাপের নির্লজ্জ এক মহিলা। মুখে অধিকাংশ সময় গালিগালাজ শোনা যায়। পর পুরুষদের সঙ্গে মেলামেশা। রাতবিরেতে নাইট ক্লাবে প্রচুর পরিমাণে মদ খেয়ে পার্টি করা। সেসময় তার এ সকল নির্লজ্জতা আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষিত করেছিল। কারণ আমি এমন ধরনেরই লম্পট অনুসন্ধান করছিলাম আমার মনের যত নোংরা কল্পনা আজে, তাদের সকলকে পূরণ করতে।
কিন্তু বিয়ের রাত জানতে পেলাম, ব্যাপারটা ঠিক তা না। মেয়েটা এগুলো শখ করে করতো না, করতো অন্য কারণে। এগুলির মধ্যে কিছু কিছু কাজ সে করতো শুধু মানুষদের দেখানোর জন্য। তার মনের আসল কথা সে আমার কাছে সেই রাত খুলে বললো। চরিত্রহীন হবার অভিনয় করার কারণ ছিল যাতে কেউ তাকে বিয়ের জন্য বাছাই না করে ফেলে। কারণ সে ভেবেছিল, এমন এক কলঙ্কিত মেয়েকে কে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবে? সে কখনও ভাবতেও পারেনি, আমার মতো রুচিসম্মত লোকজনও এই পৃথিবীতে রয়েছে। সে এই অভিনয়টা করছিল তার তৎকালীন প্রেমিক; মানিকের জন্য।
তার পরিবার ছেলেটাকে মেনে নিতে পারছিল না। তাই এসব অভিনয় করে একসময় পালিয়ে বিয়ে করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। কিন্তু তাদের আদৌ কোনো জ্ঞান ছিল না যে আমি তাদের এই প্রেম কাহিনীর খলনায়ক হয়ে প্রকট হয়ে পড়ব। সেই রাত আমাকে ওসব বলার সে প্রতিজ্ঞা করলো, সে আমার হয়েই বাকিটা জীবন কাটাবে। একথা শুনে অনেকের কাছেই ভাল লাগত, কিন্তু আমার কাছে খুবই খারাপ লাগল। বেচারি মনে করছিল, তার মতো চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ের করবার পেছনে আমার উদার মানসিকতার প্রকাশ পেয়েছে। আমি নাকি তার কাছে একজন ফেরেশতা। আমার এসব কথা শুনে বেশ বিরক্তিকর লাগছিল বলে সেই রাত আমি ঘর থেকে বের হয়ে প্রায় পঁচিশ থেকে ত্রিশটা সিগারেট খেলাম। কতো পরিকল্পনা করেছিলাম তাকে নিয়ে, আর সে বের হলো শুষ্ক এক ভদ্রমহিলা।
তার পরের সকাল সে আমাকে অরো জানালো, তার গর্ভে তার প্রাক্তন প্রেমিক; মানিকের সন্তান আছে। এ সংবাদ শোনার সাথে সাথে তাকে এক চড় মেরে, টেনে হিচড়ে, হসপিটালে নিয়ে, তার গর্ভপাত করিয়ে ফেললাম।
এ খবরটি তার প্রাক্তন প্রেমিক; মানিকের কানে পৌঁছানোর পরের সকাল তার লাশ, তার বাসার পাখায় ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেল। কিন্তু সংবাদদাতা এবং তাকে পাখায় ঝুলিয়ে হত্যাকারী আমিই ছিলাম। আমি নিজেই গিয়ে তাকে বার্তাটুকু প্রেরণ করলাম এবং তাকে ফাঁসি দিয়ে এসে পড়লাম।
ছেলেটা শহরে একা থাকতো। কেউ খুব ভাল করে তাকে জানতও না। আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই আমি তার হত্যা করে তাকে আত্মহত্যার রূপ দিয়ে দিলাম। পুলিশ তদন্তের পরও কেউ কোনোভাবেই আমার উপর সন্দেহ করার চিন্তাও করেনি। কারণ ছেলেটা নিজের প্রেম কাহিনী দুনিয়ার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিল। তাই কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না, ছেলেটার প্রাক্তন প্রেমিকার বর্তমান স্বামী এই কাজটি করতে পারে।
আমার স্ত্রী; মিমি এ খবর শুনে পুরোপুরি ভেঙে পড়ল এবং প্রায় দুই মাস বিধবার মতো মনমরা হয়ে পড়েছিল। প্রথমে প্রথমে কিছুটা মায়া লাগলেও, অনেক বেশি আনন্দ বোধ করছিলাম তার এই দশা দেখে। বিয়ে হবার এই ছয় বছরে কখনও আমার ছাড়া কোনো পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করেনি।
বাসার আনাচেকানাচে মোট ত্রিশটা গুপ্ত ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু আমার ছাড়া তার জীবনে আর কেউই নেই। আর নেই যার সঙ্গে সে দিনরাত কাটাতে আগ্রহী। ব্যাপারটা আমার কাছে আরো বিরক্তিকর লাগছিল। তার এই সকল বিরক্তিকর কর্মকাণ্ডের জন্য আজ আমার এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া।

রাতে প্রায় তিনটার দিকে শহরের কুখ্যাত পতিতালয়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। সড়কের পাশেই লাইন ধরে মহিলারা দাঁড়িয়ে থাকে। এই সড়কটা এতটাই কুখ্যাত, যে কোনো ভদ্র ঘরের মানুষ এখানে এক মুহূর্তও টিকে থাকতে পারে না। এখনকার মূল দালাল আমার এক চাচাতো ভাইয়ের বিজনেস পার্টনার, তাই এতো কুখ্যাত হবার সত্ত্বেও এখনও এই নোংরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। প্রতিরাতের মতই আজও অসাধারণ অতিরিক্ত সাজগোজ করে একেকটা ময়দার বস্তার মতো দাঁড়িয়ে আছে। এতগুলো কুৎসিত ময়দার বস্তার মধ্যে একজনকে দেখে বেশ সাদাসিধে ও ভদ্র ঘরের মনে হচ্ছে। মেয়েটা লাইনের শেষ কোণায় দাঁড়িয়ে ছিল। আমার গাড়ির আগের দুটো গাড়ির গ্রাহকদের না করে দিল। মেয়েটা দেখতে কোনো দিক দিয়েই পতিতা মনে হচ্ছিল না। তাই আমি আমার নতুন সিদ্ধান্তের জন্য তাকে বেছে নিলাম।
গাড়িটা তার কাছে নিয়ে, কাঁচ নামিয়ে, জিজ্ঞেস করলাম, "এই, রেট কতো?" আমার চোখে চোখ মেলাতে খুবই অস্বস্তিকর লাগছিল।
"এক ঘণ্টা পাঁচ হাজার টাকা।" সে বললো এক বিব্রত কন্ঠে।
তার গলার স্বর শুনেই বুঝতে পারলাম যে এটা তার প্রথমবার। এই ব্যবসায় সম্পূর্ণ নতুন। তার চেহারায় সেই স্নায়বিক দুর্বলাবস্থা দেখে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গেলাম। তার চাওয়া দাম বেশ উঁচু ছিল। পাঁচ হাজার টাকায় মাত্র এক ঘণ্টায় আমার পরিচিত কেউই রাজি হবে না। কিন্তু অঢেল পরিমাণ টাকা থাকার অর্থই হলো অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে তো ব্যয় করতেই হবে। তাই আর না ভেবে, হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললাম গাড়ির পেছনের সিটে বসে পড়তে। আমার ইশারা বুঝতে পারা সত্ত্বেও মেয়েটা জিজ্ঞাস করলো, "রেটটা ঠিক আছে কি না, আগে তা বলেন। এক ঘণ্টার পাঁচ হাজার দিতে রাজি?"
এতটুকু বলতেই তার ভয়ে হাত-পা কাঁপছিল। তার এই অসহায় অবস্থা দেখে আমি হালকা রেগে গেলাম। কিন্তু রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে, তার চেহারার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম, "হ্যাঁ! আমি সবকিছুতে রাজি। এখন দরজাটা খুলে ভিতরে বসে পড়ো।"
আমার উত্তর শোনার পর, আমার কথামতো সে গাড়ির পেছনের সিটে বসে পড়ল। গাড়ির ভেতরে বসে থাকা অবস্থায়ও সে অনেক বেশি আতঙ্কিত ছিল। তার চেহারায় এই আতঙ্ক দেখে আমার উত্তেজনা আরো বেড়ে গেল।
গাড়িতে করে তাকে মতিঝিলের নতুন এক আবাসিক হোটেল; পশ ডাইনেস্টি (Posh Dynasty) হোটেলে নিয়ে গেলাম। হোটেলটা নতুন বলতে পুরোপুরি নতুন না, কিন্তু এখানকার বাকি হোটেলগুলোর তুলনায় নতুন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
হোটেলটা তুলনামূলক নতুন হওয়ার ফলে এখানে অনেক কম মানুষ থাকে। অন্য অর্থে বলা যেতে পারে, এটা আমার পরক্রিয়া করার সিদ্ধান্তের জন্য একদম দারুণ একটা জায়গা। এখনকার স্টাফরাও আমাকে চেনে না, যা আশেপাশের অধিকাংশ হোটেলে চেনে।
রুমে ঢুকে সবচেয়ে প্রথমে আশেপাশে কোনো গুপ্ত ক্যামেরা লাগানো আছে কি না, তা খুঁজতে শুরু করলাম। ভাগ্যবশত কোথাও এমন কিছু খুঁজে পাইনি। আমার এসব কান্ড দেখে, মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়েছিল। তার চেহারায় বিভ্রান্তির ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।
আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। আমাদের মাঝে ভালই দূরত্ব বিদ্যমান ছিল। মেয়েটা কিছু বলার আগেই আমি বললাম, "এতটুকু দূরত্ব ঠিক আছে, নাকি আরো দূরে সরে বসব?"
মেয়েটি আশ্চর্য হয়ে তাকাল। তার তাকানোর ভঙ্গি দেখেই তার মনে জাগ্রত একশো একটা প্রশ্নের ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল। মেয়েটা বেশ ভদ্রভাবে বসে ছিল। আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে, নীরব হয়ে বসে ছিল। তা দেখে একটুর জন্য মনে হলো, একজন সাধারণ পতিতা নিয়ে আসাটাই আরো সুবিধার হতো। কিন্তু তাকে বাছাই করার যে কারণটা রয়েছে, তাও তো মাথায় রাখতে হবে। তাকে তো শুধু এক রাতের তৃপ্তি মেটানোর উদ্দেশ্যে নিয়ে আসিনি; এনেছি আমার সঙ্গে হওয়া প্রতারণার জবাব দিতে।
পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে তাকে জিজ্ঞাস করলাম, "এক ঘণ্টার জন্য পাঁচ হাজার হলে, সকাল পর্যন্ত কত টাকা নিবা?"
আমার প্রশ্ন শুনে বেশ অবাক হলো মেয়েটা। আমার দিকে চোখ করে তাকিয়ে, আবার নীচে তাকিয়ে বললো, "আমি সকাল পর্যন্ত থাকতে পারব না।"
একথা শুনে আমি নিশ্চিত হতে পারলাম, সে আসলেই এই পেশায় নতুন। তবে আমিও হার মানার মতো মানুষ না। ছোটবেলা থেকে যা চেয়েছি, তা পেয়েছি। চাহিদার জিনিসটা চাহিবামাত্র পেয়ে যাবার অভ্যাস থাকলে, ছোটর চেয়ে ছোট জিনিসের দামও মুহূর্তের মধ্যে বেড়ে যায়।
আমি মুচকি হেসে বললাম, "এখনই তো সাড়ে তিনটার বেশি বাজছে। এক ঘণ্টা পর তো ভোর বেলায় বের হতে হবে। এতো ভোরে একটা যুবতী সুন্দরী মেয়ের রাস্তায় চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।"
মেয়েটি নিজের দু হাত দিয়ে নিজের পায়ের উপর বেশ ভাড় দিয়ে বললো, "আমি ওসব কিচ্ছু জানি না। আমি এক ঘণ্টা ছাড়া কোনোভাবেই পারব না।"
"আচ্ছা, দশ হাজারের জন্য দুই ঘণ্টা থাকতে পারবা?"
"না! আমার পক্ষে সম্ভব না।"
"ঠিক আছে! একটা কাজ করি। আমি নিজেই, গাড়িতে করে, তোমাকে ছেড়ে আসবো। গাড়ির মধ্যেও যতক্ষণ সম্ভব, আমাকে সময় দিও। তাহলে চলবে তো?"
মেয়েটা বেশ কিছুক্ষণ ভেবে বললো, "আমি বাসায় একাই যাবো। আমার আর আপনার সম্পর্ক এই কাজ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। তার চেয়ে বেশি না আমি আপনার কিছু, না আপনি আমার। আমার ব্যক্তিগত জীবনে আপনার কোনো স্থান নেই।"
"তোমার ব্যক্তিগত জীবনে আমার প্রবেশ করার কোনো উদ্দেশ্য নেই। তবে নিজের ব্যক্তিগত জীবনে তোমার অনুপ্রবেশ ঘটাতে আগ্রহ পোষণ করি।"
"মানে?"
"মানে বুঝতে কিছুটা কঠিন হলেও, অত্যন্ত সহজ সরল একটা বিষয়। আমি তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে চাই, আর কিছুই না।" একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরো বললাম, "আমি একজন বিবাহিত, প্রতারিত এবং তৃপ্ত একজন পুরুষ। আমার জীবনে যতটা রস বিদ্যমান ছিল, তা সবই এক মুহূর্তের মধ্যে শূণ্য হয়ে গেল। সেই রস, সেই আনন্দ ফিরিয়ে আনতে আমি প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আমি শুধু পরক্রিয়া শারীরিক ভাগে আগ্রহী না, আত্মিক ভাগেও প্রচুর আগ্রহ পোষণ করি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো বলতে পারো, আমার মূল উদ্দেশ্যই হলো ভালবাসার প্রতি নতুন অনুভূতি স্থাপন করা। কিন্তু এ কাজের সফলতার জন্য কিছু বিশেষ শর্তাবলি রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান শর্তাবলি হলো তোমার সম্মতি। তাই তোমার সঙ্গে সময় কাটিয়ে, তোমাকে ভাল করে জানতে চাই, বুঝতে চাই এবং আমাদের মাঝে বিদ্যমান দূরত্বটা মেটাতে চাই।"

No comments:

Post a Comment